সহবাসের দোয়া ও নিয়ম অর্থাৎ সহবাসের নিয়ম নীতি সম্পর্কে অনেকগুলি গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর

2

 

সহবাসের দোয়া ও নিয়ম অর্থাৎ সহবাসের নিয়ম নীতি সম্পর্কে অনেকগুলি গুরুত্ব পূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

সহবাস

সহবাসের দোয়া।

সহবাসের দোয়া আরবিতে। সহবাসের দোয়া বাংলায়
সহবাসের দোয়া কখন পড়তে হয়? স্ত্রী সহবাসের আগে এই দুআ পাঠ করতে হয়

سْمِ اللَّهِ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
বাংরা উচ্চারণঃ- বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ্-শাইত্বনা ওয়া জান্নিবিশ্-শাইত্বনা মা রযাকতানা
বাংলা অর্থঃ- আল্লাহ্ নামে। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের থেকে শয়তানকে দূরে রাখুন এবং আমাদেরকে আপনি যে সন্তান দান করবেন তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখুন। (সহিহ বুখারী /১৪১, নং ১৪১; সহিহ মুসলিম /১০২৮, নং ১৪৩৪।)
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- যদি এই দুআ মুখস্থ না থাকে তবে কমপক্ষেবিসমিল্লাহ্”‌বলবেন
 
সহবাসের আগে দুআ পড়লে শয়তান ক্ষতি করতে পারে না। ক্ষতি করতে না পারার অর্থ কি?
এর অর্থ এই যে,
() ‘বিসমিল্লাহ্এর বরকতে সেই সন্তান নেক হয়। যেহেতু মহান আল্লাহ শয়তান কে বলেছেন, “আমার (একনিষ্ঠ) বান্দাদের উপর তোমার কোন আধিপত্য থাকবে না।” (সুরা হিজর আয়াত নং ৪২)
() সন্তানের স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতি হয় না
() সন্তান শিরক কুফর মুক্ত হয়
() কাবীরা গোনাহ থেকে বিরত থাকতে সক্ষম হয়
() সহবাসে শয়তান শরীক হতে পারেনা
 

সহবাস করার নিয়ম। হাদীসের আলোকে সহবাসের নিয়ম। সহবাসের নির্দিষ্ট কোন নিয়ম-কানুন আছে কি?

سَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّىٰ شِئْتُمْ ۖ وَقَدِّمُوا لِأَنفُسِكُمْ

আল্লাহ বলেন যে "তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের শস্যক্ষেত্র। সুতরাং তোমরা তোমাদের শস্যক্ষেত্রে যে ভাবে ইচ্ছা গমন করো ...."(সূরা বাকারা আয়াত নং ২২৩)

সূরা বাকারা আয়াত নং ২২৩ নাযিলের কারন......
জাবের (রাঃ) রাসূল (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ইয়াহূদীরা বলত- যদি কেউ তার স্ত্রীর সাথে পিছন দিক থেকে (যোনি পথে) সহবাস করে তাহলে সন্তান টেরা হবে। তখন আয়াত অবতীর্ণ হয়

(সহীহ বুখারী হা/ ৪৫২৮, সহীহ মুসলিম হা/ ১৪৩৫)

اَنّٰی شِئْتُمْ এই আরবি শব্দটির অর্থ হল "যেভাবে ইচ্ছা" অর্থাৎ যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে স্ত্রীদের সাথে দৈহিক মিলন কর। এখানে মিলনের কোন নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। যে কোন ধরণের আসন এক কথাই আপনি যে ভাবে বেশি আনান্দ পাবেন। শুয়ে, বসে, কাত করে, সামন থেকে, পিছন থেকে, অর্থাৎ আপনার ইচ্ছা। কোন বিধি-নিষেধ নেই তবে শর্ত হল পথ একটাই হবে আর তা হল যোনিপথ। তার বাইরে নয়। রাসূল (সাঃ) বলেন যে

سَامُقْبِلَةً وَمُدْبِرَةً إِذَا كَانَ ذَلِكَ فِي الْفَرْجِ. وفي رواية: إِذَا كَانَ ذَلِكَ فِي صِمَامٍ وَاحِدٍ

সামনের দিক থেকে সহবাস কর বা পিছন দিক থেকে সহবাস কর তবে যোনিপথে হতে হবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন স্থান হবে একটিই

(তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর, ইমাম হাকেম সহীহ বলেছেন /১৯৫)
----(এখানে যে ভাবে ইচ্ছা মানে এই নয় যে "যোনি" বাদ দিয়ে অন্য জাইগার। "যোনি পথ" ঠিক রেখে যে ভাবে ইচ্ছা, যে দিক থেকে ইচ্ছা তবে শুধু যোনি পথে)----

 

রুমে কেবল স্বামী স্ত্রী থাকলে শরীরে কোন কাপড় না রেখে কি ঘুমানো যায়?

লজ্জাস্থান অপ্রয়োজনে খুলে রাখা বৈধ নয়। পর্দার ভেতরে প্রয়োজনে তা খুলে রাখায় দোষ নেই। যেমন মিলনের সময়, গোসলের সময় বা প্রস্রাব পায়খানার করার সময়। অপ্রয়োজনের সময় লজ্জাস্থান আবৃত রাখা ওয়াজেব। রসূল (সঃ) বলেছেন, “তুমি তোমার স্ত্রী ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যের নিকট লজ্জাস্থানের হেফাজত কর।সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহ্ রাসুল! লোকেরা আপসে এক জায়গায় থাকলে?’ তিনি বললেন, “যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কেউ যেন তা মোটেই দেখতে না পায়।সাহাবী বললেন, ‘ হে আল্লহর রাসুল! কেউ যদি নির্জনে থাকে?’ তিনি বললেন, “মানুষ অপেক্ষা আল্লাহ এর বেশী হকদার যে, তাকে লজ্জা করা হবে।

৬১৪ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ৩১১৭ নং)

এখানেতুমি তোমার স্ত্রী ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যের নিকট লজ্জাস্থানের হেফাজত কর”---এর মানে এই নয় যে, স্ত্রী ক্রীতদাসীর কাছে সর্বদা নগ্ন থাকা যাবে। উদ্দেশ্য হল, তাদের মিলনের সময় অথবা অন্য প্রয়োজনে লজ্জাস্থান খোলা যাবে, অপ্রয়োজনে নয়

তাছাড়া উলঙ্গ অবস্থায় ঘুমালে আকস্মিক বিপদের সময় বড় সমস্যায় পড়তে হবে। সুতরাং সতর্কতাই বাঞ্ছনীয়

 

শুনেছি, সহবাসের সময় সম্পূর্ণ উলঙ্গ হতে নেই, রুম অন্ধকার রাখতে হয়, একে অপরের লজ্জাস্থান দেখতে নেই ইত্যাদি। তা কি ঠিক?
হল লজ্জাশীলতার পরিচয়। কিন্তু শরীয়তে তা হারাম নয়। অর্থাৎ রুম সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলে এবং সেখানে স্বামী স্ত্রী ছাড়া অন্য কেউ না থাকলে আর পর্দার প্রয়োজন নেই। স্বামী স্ত্রী একে অন্যের লেবাস উভয়ে উভয়ের সব কিছু দেখতে পারে। মহান আল্লাহ বলেছেন, তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক।” (সূরা বাকারা আয়াত নং ১৮৭)

তিনি আরও বলেন যে “(সফল মুমিন তারা) যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে। নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যাতিত; এতে তারা নিন্দনীয় হবে না। সুতরাং কেউ এদেরকে ছাড়া অন্যকে কামনা করলে, তারা হবে সীমালংঘনকারী

(সূরা মুমিনূন আয়াত নং -, সূরা মাআরিজ আয়াত নং ২৯-৩১)

নবী (সঃ) বলেছেন, “তুমি তোমার স্ত্রী ক্রীতদাসী ছাড়া অন্যের নিকটে লজ্জাস্থানের হেফাযত কর।সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহ্ রাসুল! লোকেরা আপসে এক জায়গায় থাকলে?’ তিনি বললেন, “যথাসাধ্য চেষ্টা করবে, কেউ যেন তা মোটেই দেখতে না পায়।সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! কেউ যদি নির্জনে থাকে।তিনি বললেন, “মানুষ অপেক্ষা আল্লহ এর বেশী হকদার যে, তাকে লজ্জা করা হবে।৬১৭ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ৩১১৭ নং)

সুতরাং রুম অন্ধকার না করলে এবং উভয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ হলে কোন দোষ নেই। (ইবনে উষাইমীন)

(বর্তমানে দাস-দাসী প্রথা চালু নেই। অতএব দাস-দাসী প্রথার বিধান বাদ দিয়ে চিন্তা করতে হবে)

 

 রুমে আলো জ্বেলে সহবাস করা যাবে কি? বা দিনের বেলা সহবাস করা যাবে কি? 
রুমে আলো জ্বেলে সহবাস করতে পারবেন। দিনের বেলাতেও সহবাস করতে কোন বাধা নেই।

স্ত্রী সহবাসের নিষিদ্ধ সময়। ইসলামে সহবাসের নিষিদ্ধ দিন। ইসলামে কোন কোন দিন সহবাস নিষেধ?  
কোন দিন সহবাস করা উচিৎ নয়? শুনেছি অমবশ্যা, শবে বরাতের রাতে, ঈদের রাতে পূর্ণিমার রাত্রিতে সহবাস করতে হয় না। কথা কি ঠিক? শুনেছি দিনের বেলা সহবাস করলে স্বামীর আয়ু কমে যাই?
দিবারাত্রে স্বামী স্ত্রীর যখন সুযোগ হয়, তখনই সহবাস বৈধ। আসলে কুরআন সুন্নাহার আলোকে সহবাসের কোন নিষিদ্ধ সময় নেই। এই মর্মে মহান আল্লাহ বলেন যেঅতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাদের নিকট ঠিক সেইভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন।
(সূরা বাকারা আয়াত নং ২২২)

রমজান মাসে সহবাস করা যাবে কি? রোজার সময় কখন সহবাস করা যাবে?
দিনের বেলায় রোজা অবস্থায় সহবাস করা যাবে না
রোজার মাসে রাতের বেলা সহবাস বা স্ত্রী করতে পারবেন। মহান আল্লাহ বলেছেন, “রোযার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমরা তাদের পোশাক।” (সূরা বাকারাহ আয়াত নং ১৮৭) তবে রোজা অবস্থায় সহবাস সম্পূর্ণ হারাম

রমযানের রোযা অবস্থায় সঙ্গম করলে যথারীতি তার কাফফারা আছে। একটানা দুইমাস রোযা রাখতে হবে, নচেৎ অক্ষম হলে ষাট জন মিসকীন খাওয়াতে হবে

হজ্জ বা ওমরার ইহরাম অবস্থায় সহবাস নিষিদ্ধ

মহান আল্লাহ বলেন, “সুবিদিত মাসে (যথাঃ শাওয়াল, যিলক্বদ যিলহজ্জে) হজ্জ হয়। যে কেউ এই মাস গুলোতে হজ্জ করার সংকল্প করে, সে যেন হজ্জ এর সময় স্ত্রী সহবাস (কোন প্রকার যৌনাচার), পাপ কাজ এবং ঝগড়া বিবাদ না করে।” (সুরা সূরা বাকারাহ আয়াত নং ১৯৭) ছাড়া অন্য সময়ে দিবারাত্রির যে কোন অংশে সহবাস বৈধ। (মুহাম্মাদ স্বালেহ আল-মুনাজ্জিদ)

মাসিক পিরিয়ড অবস্থায় সহবাস করা যাবে কি?

মাসিক পিরিয়ড অবস্থায় সহবাস করা সম্পূর্ণ হারাম। মহান আল্লাহ বলেছেন, “লোকেরা তোমাকে ঋতু বা মাসিক সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করে। তুমি বোল, তা কষ্ট। সুতরাং তোমরা ঋতু বা মাসিক কালে স্ত্রী সঙ্গম বর্জন কর। এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য) তাঁদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হয়, তখন তাঁদের নিকট ঠিক সেই ভাবে গমন কর, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিয়েছেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাপ্রার্থীগণকে এবং যারা পবিত্র থাকে, তাঁদেরকে পছন্দ করেন। (সূরা বাকারা আয়াত নং ২২২)

সব শেষে বলতে হয় যে......

উপরের বর্ণিত তিনটি সময় ছাড়া যখন মন চাইবে তখনি সহবাস করতে পারবে। হতে পারে দিন অথবা রাত অথবা ঈদের রাত অথবা অমব্যার। আমাদের সমাজে এই রকমের একটি কথা চালু আছে জা স্পষ্ট শিরকের অন্তর্ভুক্ত।দিনের বেলা সহবাস করলে স্বামীর আয়ু কমে যাইআপনি যদি এই কথা বিশ্বাস করেন তাহলে স্পষ্ট শিরক হবে। যার পরিণাম জাহান্নাম

 

আমাদের সমাজে প্রছালিত কিছু কুসংস্কার ভ্রান্ত ধারণা। যা ভিত্তিহীন। বিশ্বাস করলে শিরক হতে পারে। নিম্নে কুসংস্কারির লিস্ট দেয়া হলঃ-
·         স্বপ্নদোষের পর গোসল না করে স্ত্রী সহবাস করা যাবে না
·         বিদেশে বা সফরে যাওয়ার আগের রাতে স্ত্রী সহবাস করা যাবে না
·         জোহরের নামাজের পরে স্ত্রী সহবাস (মিলন) করা যাবেনা
·         চন্দ্র মাসের প্রথম এবং পনের তারিখ রাতে সহবাস করা যাবে না
·         দিনের বেলা সহবাস করা যাবে না
·         অমবশ্যার রাতে সহবাস করা যাবে না
·         ঈদের রাতে সহবাস করা যাবে না
·         রাতে সহবাস করা যাবে না
·         মঙ্গলবার সহবাস করা যাবে না
·         নিবার সহবাস করা যাবে না
·         সম্পূর্ণ উলঙ্গ হওয়া যাবে না

সহবাসের পর কি দ্রুত গোসল করতে হবে ?

সহবাসেরে পর গোসল করে নেওয়া উত্তম। নচেৎ ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাছাড়া হটাৎ এমন প্রয়োজনও পড়তে পারে, যাতে গোসল করা জরুরী। তবে যদি কেউ চাই যে সাথে সাথে গোসল করবে না তাহলেঃ- নাপাক অবস্থায় ঘুমানো, সংসারে সকল কাজ করা, খাওয়া বিভিন জাইগা যাওয়া জায়েয! নারী পুরুষ উভয়ের জন্য। কিন্তু শর্ত হল লজ্জা স্থান ধুয়ে ওজু করে নেয়া
অথবা সহবাস করতে চাইলেও তার জন্য উযু করা এবং লজ্জাস্থান ধুয়ে নেয়া মুস্তাহাব
হাদিসটি ভাল করে পড়ুন-----
উমর (রাঃ) একবার রসূল (সঃ) এর কাছে ফাতওয়া জিজ্ঞাসা করলেন যে, আমাদের কেউ কি নাপাক অবস্থায় ঘূমাতে পারবে ? তিনি বললেন, হ্যাঁ সে যেন ওজু করে তারপর ঘূমায়। এরপর যখন ইচ্ছা গোসল করে নেয়
(সহীহ মুসলিম ইসলামিক ফাউন্ডেসন অধ্যায়ঃ / হায়েয كتاب الحيض হাদিস নম্বরঃ ৫৯৬, ৬০০)
এখানে একটি কথা যা না বললেই নয়! নাপাক অবস্থায় ওজু করে গোসলের জন্য সর্বোচ্চ সময় পাবেন পরোবর্তি নামাজের আগ পর্যন্ত

সহবাসের পর গোসল না করে রান্না বা খাওয়া যাবে কি? নাপাক অবস্থায় কি কি করা যায়। গোসল ফরজ হলে কি কি করা যাবে না। সহবাসের পর গোসল সম্পর্কে হাদিস
স্বামী সহবাসের পর গোসল করার পূর্বে মহিলার জন্য ঘর সংসারের কাজকর্ম রান্না-বান্না করা যাবে কোন সমস্যা নেই। যা অবৈধ, তা হল, নামায, কাবা-ঘরের তওয়াফ, মসজিদে অবস্থান, কুরআন স্পর্শ তিলাওয়াত। ছাড়া অন্যান্য কাজ বৈধ

এই হাদিসটি ভাল করে পড়ুনঃ-

জানাবাতের সময় বের হওয়া এবং বাজার ইত্যাদিতে চলাফেরা করাআতা () বলেছেন, জুনুবী ব্যক্তি উযূ না করেও শিঙ্গা লাগাতে, নখ কাটতে এবং মাথা কামাতে পারে

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমার সঙ্গে রসূল (সঃ) এর সাক্ষাৎ হল, তখন আমি জুনুবী ছিলাম। তিনি আমার হাত ধরলেন, আমি তাঁর সঙ্গে চললাম। এক স্থানে তিনি বসে পড়লেন। তখন আমি সরে পড়ে বাসস্থানে এসে গোসল করলাম। আবার তাঁর কাছে গিয়ে তাঁকে বসা অবস্থায় পেলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ আবূ হুরায়রা! কোথায় ছিলে? আমি তাঁকে (ঘটনা) বললাম। তখন তিনি বললেনঃ সুবহানাল্লাহ্! মুমিন অপবিত্র হয় না
(সহীহ বুখারী ইসলামিক ফাউন্ডেসন / গোসল كتاب الغسل হাদিস নম্বরঃ ২৮১)
অর্থাৎ মুসলিমঅভ্যান্তরিন ভাবে অপবিত্র হলেও বাহ্যিকভাবে সে অপবিত্র হয়ে যায় না

সহবাস পরবর্তি প্রচলিত কতিপয় কুসংস্কার! যা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে
·         সহবাস করে মাটিতে পা রাখা যাবে না
·         সহবাস শেষ কোন কিছুতে হাত দেয়া যাবে না
·         এই অবস্থাই যাতে হাত দিবে তা অপবিত্র হয়ে যাবে
·         এই অবস্থাই রান্না-বান্না করলে বাড়ি থেকে লক্ষি চলে যাবে (এটি স্পষ্ট শির্ক)
·         এই অবস্থাই যত পা ফেলবে মাটি ততো অভিশাপ দিতে থাকবে
·         হাতে কিছু নিয়ে দরজা ধরতে হবে নয়তো পাপ হবে
·         বাড়ীতে কেউ মৃত্যুবরণ করলে বাড়ীতে কেউ চল্লিশ (৪০) দিন সহবাস করা যাবে না
·         সহবাসের সাথে সাথেই গোসল করতে হবে নয়তো অনেক পাপ হবে
এই গুলি নিতান্তই কুসংস্কার! ইসলামে এর কোন ভিত্তি নেই


স্ত্রী গর্ভবতী থাকা অবস্থায়ও কি সহবাসের সময় দুআ পড়তে হবে?
সহবাসের সময় দু পড়ায় দুটি লাভ আছে শয়তানের শরীক হওয়া থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করা এবং তার ক্ষতি থেকে মিলনে সৃষ্ট সন্তানকে রক্ষা করা সুতরাং যখন আমরা জানি যে, সন্তান আগের মিলনে এসে গেছে, অথবা সন্তান হবে না, অথবা সন্তান চাই না, তখনও যদি আমরা দু' পড়ি, তাহলে তাতে আমরা নিজেদেরকে আমাদের যৌনআনন্দে শয়তানের শরীক হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারব বলা বাহুল্য, সহবাসের দু' সর্বাবস্থায় পঠনীয় যেহেতু হাদিসের নির্দেশ ব্যাপক (ইবনে বায)

হস্ত মৈথুন সম্পর্কে ইসলাম কি বলে? গুপ্ত অভ্যাস (হস্তমৈথুন) ব্যবহার করা বৈধও কি?
গুপ্ত অভ্যাস (হাত বা অন্য কিছুর মাধ্যমে বীর্যপাত, স্বমৈথুন বা হস্ত মৈথুন) করা কিতাব, সুন্নাহ সুস্থ বিবেকের নির্দেশ মতে হারাম
কিতাব বা কুরআনের দলীল; আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে নিজেদের স্ত্রী অথবা অধিকারভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে অন্যথা করলে তারা নিন্দনীয় হবে না। আর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।” (সূরা মুমিনূন আয়াত নং -)

সুতরাং যে ব্যক্তি তার স্ত্রী অধিকারভুক্ত দাসী (অধিকারভুক্ত দাসী বলতে ক্রীতদাসী কাফের যুদ্ধবন্দিনীকে বুঝানো হয়েছে। এখানে কাজের মেয়ে, দাসী, খাদেম বা চাকরানী উদ্দেশ্য নয়।) ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা কামলালসা চরিতার্থ করতে চায়, সে ব্যক্তিএদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে।বলা বাহুল্য, এই আয়াতের পরিপেক্ষিতে সে সীমালঙ্ঘঙ্কারী বলে বিবেচিত হবে

লিঙ্গ স্পর্শ না করে স্ত্রী সহবাসের কথা কল্পনা করে বীর্যপাত করা কি বৈধ?
না কাজ বৈধ নয়। কারণ তা ব্যাভিচারের দিকে আকর্ষণ করতে পারে। যুবকের উচিৎ বিবাহের আগে অথবা স্ত্রীর নিকটবর্তী হওয়ার আগ পর্যন্ত সুচিন্তা করা। কুচিন্তা এসে গেলে ইচ্ছাকৃতভাবে কল্পনা পরিহার করা। ৬৩১ (লাজনাহ দায়েমাহ)
মিলন তৃপ্তির কথা স্বামী কি তার বন্ধুদের কাছে এবং স্ত্রী কি তার বান্ধবীদের কাছে বলতে পারে?
মিলন তৃপ্তির কথা স্বামীর তার বন্ধুদের কাছে এবং স্ত্রী তার বান্ধবীদের কাছে বলতে পারে না, বিশেষ করে যদি তারা অবিবাহিত হয়। মজাকছলে হলেও সে কথা কারো কাছে বলা বৈধ নয়। এটি একটি অতি নিকৃষ্ট পাপ কাজ। হাদিশ টি পড়ুন...
আল্লাহ্ রাসুল (সঃ) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ সেই ব্যাক্তি হবে, যে স্ত্রীর সাথে মিলন করে এবং স্ত্রী তার সঙ্গে মিলন করে। অতঃপর সে তার (স্ত্রীর) গোপন কথা প্রকাশ করে দেয়।” (মুসলিম)

 

সহবাস চলাকালে কথা বললে কি কোন ক্ষতি হয়?
সহবাস চলাকালে স্বামী স্ত্রীতে কথা বললে কোন ক্ষতি নেই। সে সময় কথা বললে সন্তান বোবা হয়--- ধারনা সঠিক নয়। (তুহফাতুল আরুস দ্রঃ)
পায়খানার (পিছনের রাস্তা) দারে সঙ্গম বা সহবাস করা কি হারাম?
পায়খানার (পিছনের রাস্তা) দারে সঙ্গম বা সহবাস করা স্পষ্ট হারাম যা বড় কাবিরা গুনাহার অন্তর্ভুক্ত
পায়খানার (পিছনের রাস্তা) দারে সঙ্গম বা সহবাস করা হারাম। কেননা আল্লাহ্ রাসুল (সঃ) বলেন, “আল্লাহ (কিয়ামতের দিন) সেই ব্যক্তির দিকে তাকিয়েও দেখবেন না, যে ব্যক্তি কোন পুরুষের মলদ্বারে অথবা কোন স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে।
(তিরমিযী, ইবনে হিব্বান, নাসাঈ, সহিহুল জামে ৭৮০১ নং)
যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতী স্ত্রী (মাসিক অবস্থায়) সঙ্গম করে অথবা কোন স্ত্রীর মলদ্বারে সহবাস করে, অথবা কোন গনকের কাছে উপস্থিত হয়ে (সে যা বলে তা) বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সঃ) এর উপর অবতীর্ণ কুরআনের সাথে কুফরী করে।” (অর্থাৎ কুরআনকেই সে অবিশ্বাস অমান্য করে। কারণ, কুরআনে সব কুকর্মকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।) (আহমাদ /৪০৮, ৪৭৬, তিরমিযী, সহীহ ইবনে মাজাহ ৫২২ নং)
অতএব কেউ যদি কাজ করে তাহলে সে যেন কুরআন কে অস্বীকার করে

শুনেছি মাসিক অবস্থায় সহবাস করলে এক দীনার (সওয়া চার গ্রাম পরিমাণ স্বর্ণ অথবা তার মূল্য, না পারলে এর অর্ধ পরিমাণ অর্থ) সদকাহ করে কাফফারা দিতে হবে। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ প্রভৃতি, আদাবুয যিফাফ ১২২ পৃঃ) কিন্তু স্ত্রী যদি সেই সময় মিলনে এমনভাবে উত্তেজিত করে, যাতে স্বামী তা দমন করতে না পেরে মিলন করে ফেলে, তাহলে কাফফারা কাকে দিতে হবে?

কাফফারা দিতে হবে স্ত্রীকে। আর স্বামীকেও দিতে হবে। যেহেতু সে ইচ্ছা করলে নাও করতে পারত। পক্ষান্তরে স্বামী জোড় পূর্বক করলে এবং স্ত্রী বাঁধা দিতে না পারলে তার গোনাহ হবে না এবং তাকে কাফফারা দিতে হবে না

স্ত্রীর দুধ চোষা প্রসঙ্গে ইসলাম কি বলে? স্বামী তার স্ত্রীর স্তন চোষণ করার সময় অসাবধানতায় যদি পেটে দুধ চলে যায়, তাহলে কি স্ত্রী মায়ের মত হারাম হয়ে যাবে?
স্বামী তার স্ত্রীর স্তনবৃন্ত চোষণ করে উভয়ের যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে যদি অনিচ্ছাক্রীত ভাবে স্ত্রীর দুধ তার পেটে চলে যায়, তাহলে তাতে কোন প্রকার ক্ষতি হয় না এবং স্ত্রী তার মা হয়ে যায় না। কারণ দুধ পানের মাধ্যমে হারাম হওয়ার যে সব শর্ত আছে, তা হলঃ
১। দুই বছর বয়সের মধ্যে দুধ পান করতে হবে। সুতরাং তার পরে বড় অবস্থায় দুধ পান করলে হারাম হবে না
২। শিশু অবস্থাই পাঁচবার পান করতে হবে
সুতরাং / বার পান করলে কোন প্রভাব পড়ে না। আর বড় অবস্থায় বারের বেশী পান করলেও কোন ক্ষতি হয় না। (ইবনে বায, ইবনে উষাইমীন)
স্বামী কি স্ত্রীর দুধ ইচ্ছাকৃত ভাবে পান করতে পারে?
না। এটি একটি জঘন্য কাজ। যা রুচি শীল মানুষ করতে পারে না। এই খাবার আল্লাহ নারীর বুকে রেখেছেন তার সন্তানের জন্য। আর আপনি কেমন মানুষ যে এই জঘন্য কাজ করতে পারেন

কিবলার দিকে মুখ করে প্রস্রাব পায়খানা নিষেধ, কিন্তু স্ত্রী সহবাস বৈধ কি?
কিবলামুখী হয়ে স্বামী স্ত্রী সহবাস করা অবৈধ এমন কোন দলীল নেই। যারা স্ত্রী সহবাসকে প্রস্রাব পায়খানা করার মতো মনে করেন, তারা অবশ্য তা অবৈধ বলেন। আর যাঁদের নিকট ঘরের ভিতর কিবলামুখে প্রস্রাব পায়খানা বৈধ, তাঁদের নিকট স্ত্রী সহবাসও বৈধ। আল্লাহু আলাম অর্থাত আল্লাহ্ ভাল জানেন

গর্ভাবস্থায় সঙ্গম বৈধ কি?
শরীয়তে গর্ভাবস্থাই সঙ্গম নিষিদ্ধ নয়। ভ্রূণের কোন ক্ষতির আশংকা না থাকলে গর্ভাবস্থায় সঙ্গমে দোষ নেই। খেয়াল রাখতে হবে, যাতে পেটে চাপ না পড়ে। যে মহিলার গর্ভপাত হয়, তার সাথে প্রথম তিন মাস সঙ্গম না করতে ডাক্তারগন উপদেশ দিয়ে থাকেন
সহবাস যনিত গোসলের পর প্রস্রাবের দ্বার থেকে বীর্য বের হতে দেখলে কি পুনরায় গোসল করতে হবে?
গোসলের পর প্রস্রাবের দ্বার থেকে বীর্য বের হলে তা উত্তেজনাবশতঃ নয়, বরং তা কোনভাবে ভিতরে আটকে থাকা বীর্য। সুতরাং তাতে পুনরায় গোসল করা ওয়াজেব নয়। তা প্রস্রাবের মতো, তা পুনরায় ধুয়ে ফেলে ওযু করলেই যথেষ্ট। (ইবনে বায)
স্ত্রীর লজ্জাস্থানে মুখ দেওয়া যাবে কি? একে অন্যের লজ্জাস্থান চোষণ করতে পারবে কি?
একে অন্যের লজ্জাস্থান চোষণ অবশ্যই ঘৃণিত আচরণ। যা অমুসলিম দের ক্রিস্টি কালচার থেকে এসেছে আর এই আচারন পসু পাখির আচারন, তাদের হাত নেই তাই এই কাজ করে থাকে। যা বিক্রিতো মস্তিষ্কের মানুষের দ্বারা সম্ভব। একজন স্বাভাবিক মানুষ কখনো এই জঘন্য কাজ করতে পারেনা। কারণ যে মুখে আল্লাহ্ যিকির হয়, সে মুখকে এমন কাজে ব্যবহার রুচিবিরুদ্ধ কাজ। আল্লাহ্যেই মুখে তার জিকির করতে বলেন আর মানুষ সেই মুখে নাপাক জিনিস মুখে নেই

অথছ মুখে সকল অবশতাই আল্লাহর জিকির করা যাই। কখনো অপবিত্র হয়না। আর আপনি কি ভাবে মুখে এতো জঘন্য কাজ করেন ছিঃ! লজ্জা করেনা আপনার?

একটা উদাহারন
আপনার সামনে একটি অসুস্থ বৃদ্ধ মহীলা পোসাব করল যে পাত্রে। আর পাত্র ধুয়ে আপনাকে ভাত খেতে দিল। আপনি কি খাবেন? উত্তর না! তার পরেও যদি আপনি খান, তাহলে আপনার ব্যাপার কিন্তু আমি খাবনা

নিয়মিত মাসিক হওয়ার পরও অনেক সময় খুন দেখা যায়, সে সময় কি সহবাস বৈধ?
নিয়মিত মাসিকের পরে অথবা প্রসবের চল্লিশদিন পরেও যে অতিরিক্ত খুন দেখা যায়, তাতে সহবাস বৈধ এবং নামায রোযা ওয়াজেব। একে ইস্তিহাযার খুন বলে। খুন হায়যের মতো নয়


আমরা নামাজ শুরু করি আর ভাবি কোনদিন আর নামাজ ত্যাগ করবো না। কিন্তু কিছুদিন পর আবার নামাজ ছেড়ে দেই। এই সমস্যা সবার ক্ষেত্রে দেখা যাই। বিশেষ করে যারা নামাজ পড়া শুরু করে। আপনি যদি এই ভিডিও দেখেন তাহলে আপনাকে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি হতে সাহায্য করবে ইংশা আল্লাহ্‌। 



এটিও পড়ুন

 



 

Post a Comment

2Comments

মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

  1. আনেক আজানা ,,জানা হলো ,,ইসাআল্লাহ আমি বিয়ের পর এই কথা গুলো মাথাই রাখবো,,,

    ReplyDelete
Post a Comment